ভয়াবহ দূষণের কবলে ভৈরব নদ

Voirob-67d114a3606f8.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: ভয়াবহ দূষণের কবলে যশোরের অন্যতম বৃহত্তম নদ ভৈরব। ইতঃপূর্বে ২৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নদ প্রবহমান করার প্রকল্প নিলেও কার্যত তা সফল হয়নি। প্রতিনিয়ত বাসা-বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য সরাসরি নদের পানিতে এসে পড়ছে। বছরের পর বছর নদে জমে থাকা পানিতে নোংরা বর্জ্য মিশে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ হচ্ছে। বিষাক্ত পানিতে হুমকিতে পড়েছে জলজ প্রাণীও।

পরিবেশবিদরা বলছেন, নদের দূষণরোধে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ দায়সারা। ফলে নদ দূষণমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। দূষণ রোধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

জানা যায়, ভৈরব নদ প্রবহমান করতে ২০১৬ সালে ৫ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’র কাজ শুরু হয়। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হয়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ভৈরবের নাব্য বাড়িয়ে নৌ-যোগাযোগের উন্নয়ন, মাথাভাঙ্গা নদের সঙ্গে ভৈরবের সংযোগ, ভৈরব নদ ও আশপাশের খালগুলো খনন করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলেও সুফল মেলেনি। ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে ভৈরব নদ।

যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুরের তাহেরপুর থেকে পূর্ব দক্ষিণে ভৈরব নদ প্রবাহিত হয়েছে। একই স্থান থেকে পশ্চিম-দক্ষিণে কপোতাক্ষ নদ প্রবাহিত হয়েছে। ভৈরব নদে উজানের পানি প্রবাহ নেই। বছরে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও দুই নদে ভাগ হয়ে যায়। ফলে নদে পানি প্রবাহিত হয় না। ভৈরবে জমে থাকা পানি পরিবর্তন হয় না। পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় দূষণ বাড়তে থাকে। যশোর শহরের খয়েরতলা থেকে ঝুমঝুমপুর প্রগতি বালিকা বিদ্যালয় পর্যন্ত নদের দুই পাশের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, হাসপাতাল-ক্লিনিকের ড্রেন সরাসরি নদের সঙ্গে সংযুক্ত। এরমধ্যে চারটি ড্রেন সবচেয়ে বড়। শহরের ঘোপ জোড়া বাড়ি এলাকা থেকে জেলখানা পর্যন্ত ইউ আকারে নদের উভয়পাশে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, কিংস হাসপাতাল, একতা ক্লিনিক, জনতা ক্লিনিক, দড়াটানা হাসপাতাল, কুইন্স হসপিটালসহ অসংখ্য ক্লিনিক-হাসপাতালের সার্জারির তরল বর্র্জ্য সরাসরি নদে পড়ছে। দড়াটানা ব্রিজের ডান তীরে বাজারের সব ধরনের বর্জ্য সরাসরি নদের পানিতে পড়ছে।

সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের এক পরীক্ষায় দূষণের চিত্র ধরা পড়েছে। নদের দড়াটানা ও ঢাকা রোড ব্রিজের পানিতে ডিজলভ অক্সিজেন (ডিও) ও জৈব রাসায়নিক অক্সিজেনের (বিওডি) মান স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। যা জীবনের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। দড়াটানা পয়েন্টে ডিও মান ৩ দশমিক ৮১ ও ঢাকা রোড ব্রিজে ৪ দশমিক ৬৯। যা পৃথিবীতে প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অপর্যাপ্ত। জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন (বিওডি) মান দড়াটানা পয়েন্টে ৯ ও ঢাকা রোড ব্রিজে ১০। যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।

এ বিষয়ে পরিবেশবিদ অধ্যাপক ছোলজার রহমান বলেন, উজানের পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় চৌগাছার তাহেরপুর থেকে যশোর শহরের ঝুমঝুমপুর পর্যন্ত ভৈরব নদ অনেকটা বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। বিকল্প উপায়ে স্থানীয় খাল, বিল ও জলাশয়ের সঙ্গে যুক্ত করে কিছুটা হলেও পানি প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব ছিল। সেটিও সংশ্লিষ্টরা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দূষণ উৎস বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পৌরসভাকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, নদের দূষণ রোধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। শহরের বাজার অংশে তারকাঁটার বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করছি। ভৈরব নদের পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সংলগ্ন খাল, বিল খনন করে সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক ইমদাদুল হক জানান, ভৈরব নদের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। এই নদের পানিতে বিওডি, সিওডি কোনো প্যারামিটার সঠিক মাত্রায় নেই। এই নদের পানি জীব ও জলজ প্রাণীর জন্য হুমকিস্বরূপ।

তিনি আরও বলেন, পয়ঃবর্জ্যরে জন্য এই নদী দূষিত হচ্ছে। বাজার, হাসপাতাল, পৌরসভার ময়লা এখানে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top