পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত রাজশাহীর ইন্টার্ন ও ট্রেইনি চিকিৎসকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরাও। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছেন তারা। পাশাপাশি প্রাইভেট প্র্যাকটিসও বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সর্বস্তরের চিকিৎসক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রামেক হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানে বক্তারা জরুরি বিভাগের বাইরে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণা দেন। দাবি আদায় না হলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এরপর থেকেই রাজশাহীর স্বাস্থ্যসেবা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
রামেক হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, সকাল থেকে ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসক নেই। জরুরি প্রয়োজন হলেও পরামর্শের জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। নার্সদের কাছে গেলে তারা কোনো সমাধান দিতে পারছেন না। বহির্বিভাগেও কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। ফলে নতুন রোগীদেরও চিকিৎসাসেবা পাওয়া সম্ভব হয়নি।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। রাজশাহীর লক্ষীপুর এলাকার ক্লিনিকপাড়ায় বহু রোগীকে দিশেহারা হয়ে ঘুরতে দেখা গেছে।
দুপুরে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল ইসলাম মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন যে কোনো চিকিৎসক বসবেন না। তিনি রোগীদের ফেরত যেতে বলছিলেন এবং প্রয়োজনে হটলাইন নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে আসার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। হতাশ রোগী ও তাদের স্বজনরা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলেন।
পপুলারের সামনে হুইলচেয়ারে বসেছিলেন কিডনি রোগী মনোয়ারা খাতুন। তার ছেলে মনোয়ার হোসেন বলেন, এক হাজার ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে মেহেরপুর থেকে এসেছি। এসে শুনছি, আজ ডাক্তার বসবেন না। এখন রোগী নিয়ে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।
চুয়াডাঙ্গা থেকে হৃদরোগী মেয়েকে নিয়ে আসা কোহিনুর বেগমও একই দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, এত দূর থেকে এসে শুনতে হলো ডাক্তার নেই! আগে জানালে আসতাম না।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, প্রথমে ইন্টার্ন, পরে ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু হয়। আজ (মঙ্গলবার) সিনিয়র চিকিৎসকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন। ফলে বহির্বিভাগ ও প্রাইভেট চেম্বারগুলো বন্ধ রয়েছে।
তিনি জানান, হাসপাতালের ৬০টি ওয়ার্ডের মধ্যে শুধুমাত্র জরুরি বিভাগ ও নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য চিকিৎসাসেবা চালু রয়েছে। জরুরি অস্ত্রোপচারও করা হচ্ছে। তবে আগে থেকেই ভর্তি থাকা রোগীরা কি ধরনের সেবা পাচ্ছেন, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
তিনি বলেন, এ আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে আশা করছি। আগামীকাল (বুধবার) হাইকোর্টে একটি রায় ঘোষণা হবে। সে অনুযায়ী চিকিৎসকরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
উল্লেখ্য, এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ যেন নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে না পারেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) এ আইনের বিরুদ্ধে করা রিট প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে চিকিৎসকদের এ আন্দোলন চলছে।
রামেক হাসপাতালের আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রতিনিধি ডা. আবদুল্লাহ বলেন, আমরা বারবার আলটিমেটাম দিয়েছি, কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি। সিনিয়র চিকিৎসকরাও আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। এরপরও দাবি আদায় না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।