জাকাতের পরিচয় ও বিধান

Untitled-1-67d110a9b8826.jpg

ডেস্ক রিপোর্ট: জাকাতের শাব্দিক অর্থ হলো- পবিত্রতা, প্রবৃদ্ধি, বিকাশ ও উন্নতি। যেহেতু জাকাত মানুষকে কৃপণতা, গুনাহ ও আজাব হতে পবিত্র ও মুক্ত করে এবং সার্বিক পবিত্রতা, সম্পদের উন্নতি এবং অন্তরের স্বচ্ছতা ও পবিত্রতার কারণ হয়, তাই এই হুকুমটির নামকরণ করা হয়েছে ‘জাকাত’।

জাকাতকে ‘সদকা’ও বলা হয়। কারণ, জাকাত দিলে জাকাতদাতার ঈমানের সত্যায়ন হয় এবং তার অন্তরের সততা ও সত্যবাদিতা প্রকাশ পায়।

শরীয়তের পরিভাষায় জাকাত বলা হয়- সম্পদশালী ব্যক্তি তার সম্পদের শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত একটি অংশকে (তথা চল্লিশ ভাগের এক ভাগ) সৈয়দ বংশের নয়, নেসাবের মালিক নয় এমন দরিদ্র মুসলমানকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। আর তা দেওয়া হবে একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে রাজি খুশি করার লক্ষ্যে, প্রদানকারীর কোনো প্রকার স্বার্থ তাতে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারবে না।

জাকাতের বিধান

১। জাকাত ইসলামের বুনিয়াদী হুকুমগুলোর মধ্যে একটি হুকুম। কুরআনে কারীমের যেখানেই নামাজের হুকুম এসেছে সেখানেই জাকাতের হুকুমও আলোচিত হয়েছে। যেমনিভাবে জাকাত ফরজ হওয়ার উপর ঈমান (বিশ্বাস) রাখা ফরজ, ঠিক তদ্রুপ জাকাত আদায় করাও ফরজ। জাকাত অস্বীকারকারী কাফের ও মুরতাদ বলে গণ্য হবে এবং জাকাত আদায় না করলে মানুষ ফাসেক হয়ে যাবে।

২। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম হলো: জাকাত অস্বীকারকারীদের সঙ্গে ঠিক সেভাবেই যুদ্ধ-লড়াই করা হবে, যেভাবে নামাজ অস্বীকারকারীদের সঙ্গে য্দ্ধু-লড়াই করা হয়।

জাকাতের বিধান করার আল্লাহ পাকের হিকমত কী?

জাকাতের বিধান করার নেপথ্যে হিকমত হলো- প্রত্যেক শহরে অবশ্যই দুস্থ, অনাথ, অসহায় ও মুখাপেক্ষী লোক রয়েছে। আজ একজন এই অবস্থায় পতিত হয়েছে তো কাল আরেকজন এর শিকার হতে হচ্ছে। তাই দারিদ্র বিমোচন এবং প্রয়োজন পূরণের কোনো কার্যক্রম ও পদ্ধতি (তথা যাকাত) যদি না থাকে, তা হলে অনাহারে ও অর্ধাহারে এই নিরন্ন ও নিঃস্ব মানুষের ধ্বংস অবধারিত হয়ে পড়ে।

তাছাড়া সুস্থ মস্তিষ্কের সবাই অকপটে স্বীকার করে যে, জাকাত প্রদানের মাধ্যমে মানবজাতির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়। ফলে মানুষের সাথে সুসম্পর্ক ও সদাচার গড়ে ওঠে। যদি জাকাতের বিধান না দেওয়া হতো, তাহলে মানুষ সহানুভূতিশীল হতে পারবে না, আর এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষের মাঝে চরম অনিষ্টতা, কৃপনতা ও অসৎ লোভের মতো ধ্বংসাক্তক রোগ সৃষ্টি হতো।

জাকাতের নেসাব হলো, সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ব্যাংকে জমাকৃত যে কোনো ধরনের টাকা, ফিক্সড ডিপোজিট হলে মূল জমা টাকা অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে।

স্বাধীন, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও বুদ্ধিসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী যার কাছে ঋণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও প্রয়োজনীয় খাদ্য-বস্ত্রের অতিরিক্ত সোনা, রুপা, নগদ টাকা, প্রাইজবন্ড, সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, শেয়ার ও ব্যবসায়িক সম্পত্তির কোনো একটি বা সবকটি রয়েছে, যার সমষ্টির মূল্য উল্লিখিত নেসাব পরিমাণ হয়, তিনিই সম্পদশালী। এ পরিমাণ সম্পদ এক বছর স্থায়ী হলে বা বছরের শুরু ও শেষে থাকলে বছর শেষে জাকাত দিতে হবে।

মালে নামি অর্থাৎ বর্ধনশীল সম্পদের জাকাত দিতে হয়, যদি নেসাব পরিমাণ হয়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top